চেক বুক কূটনীতি | Check Book Diplomacy
চীনের দেওয়া বড় অংকের ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে ঋণগ্রহীতা দেশগুলো। ফলে দেশগুলোর ঘাড়ে চেপে বসছে ঋণের বোঝা। ‘চেক বুক কূটনীতি’র কাছে ধরা খেয়ে দেশগুলো চীনের হাতে তুলে দিচ্ছে ভূমি, বন্দর, এমনকি বিমানবন্দর। এতে করে চীনের বিস্তৃত কৌশলগত ও সামরিক উচ্চাকাঙ্খা বাস্তবায়নের পথ সুগম হচ্ছে। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ১৬টি দেশ চীনের কাছ থেকে বড় অংকের ঋণ নিয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি ও মালয়েশিয়া। চীনের কাছ থেকে বড় অংকের ঋণ গ্রহণে শীর্ষে রয়েছে ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর প্রকল্পের মাধ্যমে পাকিস্তানে ৬২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে চীন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চীনের কাছে একটি বন্দর হস্তান্তর করেছে ইসলামাবাদ। একই সঙ্গে পাশেই একটি নৌঁঘাটি নির্মাণের জন্য ভূমি সমর্পণ করেছে।
পাকিস্তানের অনেক বিশেষজ্ঞ এই বড় অংকের ঋণ সুদসহ কিভাবে ইসলামাবাদ শোধ করবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। বিভিন্ন খাতে এরই মধ্যে চীনের কাছ থেকে ১৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে পাকিস্তান।
বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্পে শ্রীলঙ্কাকে ৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে চীন। পাকিস্তানের মতোই শ্রীলঙ্কা দেশটির হাম্বানতোতা বন্দর চীনকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে। এরই মধ্যে বন্দরটিতে দক্ষিণ চীন সাগর হয়ে চীনা জাহাজ নোংর করা শুরু করেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরেই কম্বোডিয়ায় চীন ৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া গত দুই দশকে চীনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণতো রয়েছেই। দেশটির বিদেশি ঋণের ৬০ শতাংশই নেওয়া হয়েছে বেইজিংয়ের কাছ থেকে। চীনের প্রতি এই নির্ভরতার ফলেই যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের সঙ্গে সামরিক মহড়া বাতিল করেছে কম্বোডিয়া। ঋণে জর্জরিত কম্বোডিয়ার কাছ থেকে চীনা অভিবাসীরা দেশটির কৃষি জমির বড় অংশের মালিকানা নিয়েছেন। চীন দেশটির নতুন রেলওয়ে লাইনের জন্য ৬.৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এটা স্পষ্ট নয়, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে কম্বোডিয়ার কাছে কী চাইবে চীন।
অস্ট্রেলিয়ার কাছের দেশ পাপুয়া নিউ গিনির সরকার হয়ত চীনের কাছে তেল, সোনা, কপার ও কফি ক্ষেত্র তুলে দিতে পারে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। চীন এরই মধ্যে দেশটির নিকেল খনির বড় অংশের মালিকানা পেয়ে গেছে এবং সড়ক, বন্দর ও উচ্চগতির ইন্টারেনেটে বিনিয়োগ করছে। গত পাঁচ বছরে চীনের কাছ থেকে নেওয়া অংশ দাঁড়িয়েছে ২০ মিলিয়ন ডলার।
এক সময় চীনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত মালয়েশিয়াও দেশটির প্রভাবের কাছে হার মানছে। দেশের উন্নয়নের ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পর দক্ষিণ চীন সাগর থেকে আপত্তি প্রত্যাহার করে নিয়েছে মালয়েশিয়া। দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের হস্তক্ষেপের ফলে ফিলিপাইনের কলা রফতানি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে।
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ভানুয়াতুর বিদেশি ঋণের অর্ধেকই দিয়েছে চীন। সেখানে একটি নৌঘাঁটি নির্মাণ করতে পারে বেইজিং।
Post a Comment